
নীলষষ্ঠী পূজা কেন করা হয়?
নীলষষ্ঠী পূজা বাঙালিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এই নীলষষ্ঠী পূজা কেন করা হয় জানেন, নীলকন্ঠ শিবের অপর নাম। মহাদেব সমুদ্রমন্থনের সময় হলাহল পান করেছিলেন সেই জন্য মহাদেব কে নীলকন্ঠ হিসেবে মানা হয়। অপরদিকে দেবী পার্বতী মা ষষ্ঠীর আরেক রূপ তাই ব্রতের নাম নীল ষষ্ঠী ব্রত। পুরানে লেখা আছে আজকের দিনে নীলকন্ঠ ও দেবী লীলাবতী দুজনের বিয়ে হয়েছিল তাই এই দিনটিকে লীলাবতীর বিয়ে হিসেবেও ধরা হয়। সন্তানহীন দম্পতিরা যদি আজকের দিনে মহাদেবের জন্য উপোস করে নীল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করেন তাহলে তারা সন্তান লাভ করতে সক্ষম হবেন অপরদিকে যাদের সন্তান রয়েছে তাদের সন্তান যাতে দুধে ভাতে থাকে অর্থাৎ ভালোভাবে সুস্থভাবে সমস্ত কাজে এগিয়ে যেতে পারে এর জন্য নীল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করা হয়।
নীলষষ্ঠী পূজার নিয়ম কী?
প্রধানত মেয়েরাই নীল ষষ্ঠী পূজার ব্রত করে থাকেন। যেসব মেয়েরা নীল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করে তাদেরকে আগের দিন রাতে নিরামিষ খাবার গ্রহণ করতে হয়। পরের দিন সকাল সকাল স্নান সেরে নিয়ে মহাদেবের পুজোর জন্য যা যা উপকরণ লাগে সেগুলো জোগাড় করতে হয়। মহাদেব অল্পেতেই সন্তুষ্ট। তাই মহাদেবের অপর নাম আশুতোষ। মহাদেবকে খুব অল্প উপকরণ দিয়ে পুজো করলেই সন্তুষ্ট করা সম্ভব কিন্তু সেটা মনের ভক্তি দিয়ে করতে হয়। যদি আপনি অনেক উপকরণ দেন কিন্তু আপনার মনের মধ্যে ভক্তি না থাকে তাহলে কিন্তু সেই পূজা বৃথা বলে মনে করা হয়।
মহাদেবের পূজোর জন্য আপনার সব থেকে প্রধান যে উপকরণটি লাগবে সেটি হল বেলপাতা, এছাড়াও লাগবে আকন্দ ফুল, নীল অপরাজিতা ফুল, ধুতুরা ফুল ও ধুতুরা ফল। এছাড়াও ফলের মধ্যে আপনি নিতে পারেন বেল, আম ইত্যাদি। মা ষষ্ঠীর জন্য আপনাকে একটি লাল রঙের ফুল জোগাড় করতে হবে এবং মা ষষ্ঠীর জন্য সিঁদুর ও আলতা নিতে হবে। পঞ্চামৃতের জন্য আপনাকে নিতে হবে দুধ, দই, গঙ্গাজল, ঘি ও মধু। সঙ্গে ধূপ বাতি নিতে হবে।
নীল ষষ্ঠী পূজার নিয়ম হচ্ছে সন্ধ্যেবেলা। সন্ধ্যেবেলা শুদ্ধবস্ত্রে আপনি মহাদেবের মন্দিরে কিংবা বাড়িতেও নীল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করতে পারেন। পূজার সব উপকরণ নিয়ে একে একে মহাদেবের চরণে নিবেদন করুন এবং মা ষষ্ঠীর চরণেও নিবেদন করুন যদি বাড়িতে শিবলিঙ্গ থাকে তাহলে পঞ্চমৃত দিয়ে সেটি ধুয়ে দিন। প্রতিটি সামগ্রী মহাদেবকে অর্পণ করার সময় ওম নমঃ শিবায় মন্ত্র জপ করুন। ওম নমঃ শিবায় মন্ত্র জপ করে প্রতিটি সামগ্রী মহাদেবের চরণে অর্পণ করুন এবং সন্তানের মঙ্গল কামনার জন্য মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রটি পাঠ করুন।
পুজোর সমস্ত নিয়ম পালন হয়ে গেলে। শেষ নিয়ম হচ্ছে নীলের ঘরে বাতি দেওয়া নিয়ম। এটি এই পুজোর শ্রেষ্ঠ নিয়ম হিসেবে ধরা হয়। পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পর আপনার যদি একটি সন্তান থাকে তাহলে একটি প্রদীপ মহাদেবের কাছে জ্বালিয়ে দিন। আর যদি দুটি সন্তান থাকে তাহলে দুটি প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবেন মহাদেবের চরণে। পারলে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবেন যদি তার সম্ভব না হয় তাহলে অন্য প্রদীপ কিংবা বাতি দিয়েও আপনি ব্রত সম্পন্ন করতে পারেন। বাতি জ্বালিয়ে দেওয়ার পর সন্তানদের মঙ্গল কামনা করে আপনার মনস্কামনা ভগবানকে জানান। পুজো হয়ে গেলে ফিরে এসে আপনি জল এবং খাবার গ্রহণ করুন।
২০২৫ সালে নীলষষ্ঠী পূজার দিন ও শুভ সময় কবে?
নীল ষষ্ঠী পূজার নিয়ম যতটা জানা প্রয়োজনীয় সেরকমই নীল ষষ্ঠী পূজার শুভ সময় না জানলে পুরো ব্রততাই বিফলে যেতে পারে তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক নীল ষষ্ঠী পুজোর দিনক্ষণ ও শুভ সময় কখন।
এবছর অর্থাৎ ইংরেজির ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল রবিবার নীল ষষ্ঠীর ব্রতের দিন পড়েছে। বাংলার ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ৩০ শেষ চৈত্র। প্রধানত বাংলা বর্ষ শেষের আগের তারিখটাতেই এই নীল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করার প্রচলন রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যার পর আপনি নীল ষষ্ঠী ব্রত পালন করতে পারেন। অনেকেই দিনের বেলা এই ব্রত পালন করে থাকে কিন্তু মহাদেবের পুজোর শুভ সময় সবসময় সন্ধ্যেবেলায় পালন হয়ে থাকে। নীলের ঘরে বাতি দেওয়ার নিয়ম সন্ধ্যেবেলাতেই পালন করতে হয়। তাই আপনি যতক্ষণ না নীলের ঘরে বাতি জ্বালছেন আপনার ব্রত কিন্তু সম্পন্ন নয়।
তাই এ বছর নীলের ঘরে বাতি দেওয়ার শুভ সময় সন্ধের ৬টা বেজে ৫৮ মিনিট থেকে রাত্রি ৭টা বেজে ৫১ মিনিট পর্যন্ত। যেসব দম্পতিরা কিংবা মায়েরা নিজের সন্তান এবং পরিবারের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত পালন করছেন তারা অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে নিজের ঘরে বাতি জ্বেলে আপনার ব্রত সম্পন্ন করবেন।