Weeding look বিয়ের সাজতো অনেক দেখেছেন কিন্তু টাক মাথাতেই কনে সুন্দর করে সেজে, বিয়ে করতে এসেছে এই ঘটনা বোধহয় প্রথমবার নিজের চোখে দেখল বিশ্ববাসী। সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি খুবই ভাইরাল হচ্ছে যে ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে কনে টাক মাথাতে সুন্দরভাবে সেজে বিয়ে করছে। যেন এক অবাক করা বিষয়। মনে হচ্ছে কোন সিনেমার শুটিং হচ্ছে বোধহয়। হয়তো মেয়েটিকে এমনই এক সাহসী চরিত্রে অভিনয় করতে হচ্ছে যেমনটা এখনকার দিনে হয়ে থাকে। তবে না এটা কোন কাল্পনিক গল্প নয় এটা বাস্তব। হ্যাঁ। শুনে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
চলুন তাহলে, মেয়েটির ঘটনাটি আপনাদেরকে পুরোটা জানানো যাক। মেয়েটির নাম নিহার সাচদেব। ছোটবেলা থেকেই নিহারের চুল উঠে যাওয়ার সমস্যা ছিল যখন তিনি ছয় বছর বয়সী ছিলেন তখনই তিনি লক্ষ্য করছিলেন তার ভ্রুয়ের চুলগুলো উঠে যাচ্ছে। এমনকি মাথার চুল ক্রমশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে। তিনি এমনটা জানিয়েছেন ক্লাসে যখন টিচার পড়াতেন তখন তার পড়ার দিকে মন ছিল না সে তার নিজের চুল নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এবং পরে তিনি ঠিক করলেন তিনি তার মাথাটাকে ন্যাড়া করিয়ে নেবেন। এই সিদ্ধান্ত যখন তিনি বাড়িতে জানান তখন তার বাড়ির লোকও তাকে সাহায্য করেছিল। তার বাড়ির লোক তাকে এটাই বলেছিল যদি তুমি এটাতে খুশি হয়ে থাকো তুমি তাহলে সেটাই কর। নিহার কিন্তু সেটাই করেছিল যেটা তার ঠিক বলে মনে হয়েছিল। তারপর থেকেই নিহার টাক মাথাতেই বড় হয়ে উঠেছে।
সমাজের কাছে এতদিন ধরে মেয়েদের সৌন্দর্যের যে ধারণাটা ছিল সেটা নীহার একেবারেই বদলে দিয়েছে। সবাই বরাবর এটাই বলেছিল কেশেতেই নারীদের বেশ। তবে সে ধারণাটা একেবারেই পাল্টে দিয়েছে নিহার। টাক মাথাতেই সবকিছু নিজের মতো করে সে নিজের জীবনটা নিজের মতো করেই কাটিয়েছে। হয়তো অনেকের কাছেই তাকে কটাক্ষ হতে হয়েছে কিন্তু তবুও সে তার ধারণা অন্যের জন্য বদলে দেয়নি। সে তার সৌন্দর্যের রূপটাকে অন্যদের মতো করে মিথ্যে চুল দিয়ে ঢাকেনি।
এমনকি বিয়ের দিনেও যেখানে প্রতিটা নারীর স্বপ্ন থাকে নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর করে তোলা। সেই দিনটিতেও কিন্তু সে বাস্তবটাকেই সবার সামনে তুলে ধরেছে। নিজের মাথাটা মোটেও নকল চুল দিয়ে ঢাকেনি সে বরং তার টাক মাথাতেই সে কনের সমস্ত সাজটা তুলে ধরেছে। টাক মাথাতেই পড়েছে সুন্দর করে টিকলি, সঙ্গে মানানসই কানের দুল, গলায় চওড়া একটি হার, নাকে নথ। দুই হাত ভর্তি লাল চুড়ি আঙুলে আংটিতেও কিন্তু পরতে ভোলেনি নিহার। দুই হাত ভর্তি মেহেন্দি, সঙ্গে লাল রঙের লেহেঙ্গা আর তার সঙ্গে মানানসই হালকা নীল রঙের ব্লাউজ এবং ওড়না। ওড়নার দুই প্রান্ত ধরে সুন্দর পাথরের কাজ করা। গলায় ফুলের মালা। আর সব থেকে যেটা নজর কেড়েছে সেটা হল কনের মুখের মিষ্টি হাসি। প্রতিটা ছবিতে নিহার তার হাসি বজায় রেখেছে। সত্যি হয়তো এটাকেই বলে সত্যিকারের আনন্দ।
এবার তাহলে আসা যাক পাত্রের কথায়। পাত্র কিন্তু দেখতে মন্দ নয়। পাত্রের নাম অরুণ গনপাঠী। বিয়ের দিনে পাত্র সেজে উঠেছিল সুন্দর একটা সাদা রংয়ের পাঞ্জাবিতে। মাথায় পাগড়ি, কপালে সিঁদুরের টিপ, গলায় মালা সঙ্গে মুখে মিষ্টি হাসি। বিয়ের প্রতিটা ছবিতে পাত্র কেও কিন্তু নিজের হাসিটা বজায় রাখতে দেখা গিয়েছে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে পাত্র কিন্তু নিহার কে পেয়ে খুবই খুশি।
ভালোবাসা যে শুধুমাত্র সৌন্দর্য দেখে হয় না সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে অরুণা নিহারের এ ভালোবাসার সম্পর্কটি। এখনো আমাদের সমাজ মেয়েদের রূপটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে যায় তা নিয়ে প্রতিটি মেয়েকে দিনের পর দিন সহ্য করতে হয় নানা ধরনের লাঞ্ছনা গঞ্জনা। কেউ মোটা, কেউ কালো, কেউ বেঁটে কারো মাথায় চুল কম। জন্মের পর থেকেই মেয়েদেরকে এসব শুনে শুনেই বড় হতে হয় আর সেটা কারা বলে আমাদের আশেপাশের মানুষরাই। ছোটবেলা থেকেই স্কুল কলেজ যেখানেই মেয়েরা যাক না কেন তাদেরকে এইসবের মুখে পড়তে হয়। এমনকি বিয়ের সময়ও একটা মেয়ে কতটা গুনি সেটা দেখার আগে এটা দেখার বেশি প্রয়োজন হয় মেয়েটি কতটা সুন্দরী অর্থাৎ সুন্দরী বলতে তার চোখ নাক মুখ সুন্দর কিনা গায়ের রং ফর্সা কিনা মাথা ভর্তি চুল আছে কিনা এইসব। যদি তুমি নিজের সৌন্দর্যের রেখাটা পার করতে না পারো তাহলে হয়তো তোমার বিয়ে হবে না তখন বাড়ির লোক কথা শোনাবে। আর যদিও তোমার বিয়ে হয় তাহলে শ্বশুর বাড়ির লোক তোমাকে কথা শোনাবে।
কিন্তু এই ভুলটাই ভেঙে দিয়ে নিহার। নিজের রূপটাকে নিয়েই সুন্দর আছে আনন্দে আছে। তাই প্রতিটা মেয়ের দরকার আশেপাশের লোক কি বলছে সেটা না দেখে নিজেকে ভালোবাসা যেমন আছি তেমন ভাবেই নিজেকে মেনে নেওয়া আর সেটাকেই ভালোবেসে যাওয়া।



